BookReview: ক্রীতদাসের হাসি
# BookReview: ক্রীতদাসের হাসি
# লেখক: শওকত ওসমান
মানুষ চাইলেই কাউকে জোর করে সুখী করতে পারেনা, না পারে টাকা দিয়ে সুখ কিনতে। সুখ এমন এক বস্তু যা কেবল অাত্মতৃপ্তিতেই পাওয়া যায়। যখন কেউ কারওর সুখি হওয়ার সমস্ত উপকরণ ছিনিয়ে নিয়ে টাকা পয়সা কিংবা বিলাসবহুল বাড়ি দিয়ে সুখী করতে চায়, বিপত্তি বাধে তখনই। শওকত ওসমান রচিত উপন্যাস "ক্রীতদাসের হাসি" একই বার্তা বহণ করে।
গভীর রাতে যখন খলিফা হারুন অার রশিদ চিন্তায় জর্জরিত হয়ে বাগানে পায়চারী করছিলেন। তখন তারই এক ক্রীতদাস নির্লিপ্ত মনে হাসছিল। তা দেখে খলিফার মনে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হল। তিনি ক্রীতদাসের হাসির রহস্য জানার জন্য বিচলিত হয়ে পড়লেন। কিছুদিন পর অাবিষ্কার করলেন খলিফার দাসী মেহেরবান এক যুবকের জন্য রাতে খাবার নিয়ে অাসেন এবং তারা দু'জনে গভীর রাত পর্যন্ত হাসি-খুশিতে মেতে উঠেন। তা দেখে খলিফা ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনোএক রাতে তাদের তাবু অাক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এক পর্যায়ে খলিফা হারুন অার রশিদ জানতে পারেন তারা কিছুদিন পূর্বে বিবাহবন্ধনে অাবদ্ধ হয়েছে। তাই অাইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া যায়না। তখন তিনি বলেন তার বিনা অনুমতিতে কখনোই তার রাজ্যে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। সুতরাং তাকে (তাতারি) শাস্তি পেতেই হবে। তবে তাকে এক শর্তে ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদি সে নিয়মিত খলিফার সামনে প্রতিরাতের মতো বিশুদ্ধ হাসি হাসতে পারে। বিনিময়ে অারও তাকে দেওয়া হবে অসংখ্য টাকাকড়ি ও সুন্দর বাগান সমেত একটি বিলাসবহুল বাড়ি।
এরপর খলিফার নির্দেশে একজন সামান্য ক্রীতদাসকে রাখা হল রাজ্যের সবথেকে দামী অার সুন্দর বাড়িতে। সেখানে তার অাপ্যায়নের জন্য রইলো অগণিত দাসদাসী। অথচ ক্রীতদাসের মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। খলিফা হারুন অার রশিদ যতোবার তার কাছে অাসেন শুধু একটুখানি হাসি দেখার জন্য প্রতিবারই তিনি খালি হাতে ফিরে যান। এবার তাকে শেষ বারের মতো সাবধান করে দেওয়া হল পরের বার যদি সে খলিফার সামনে অাগের মতো সুন্দর করে হাসতে না পারে তবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। এতেও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলনা। এখনো সে অাগের মতোই নির্জীব থাকে। কারওর সাথে কোনো কথা বলেনা। এতে খলিফা অনেক রেগে গেলেন এবং সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন তাকে কালকুঠুরিতে বন্ধী করতে এবং কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিতে। যখন তাতেও কিছু হল না তখন খলিফা হারুন অার রশিদ কালকুঠুরিতে এক দাসীকে পাঠালেন তাতারিকে রাজি করাতে সে যেন জাহাপনার অাদেশ মেনে নেই। তাহলে তার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
মেহেরবান যখন ক্রীতদাসের সামনে উপস্থিত হল তখন তিনি দেখলেন তাকে চেনাই যাচ্ছে না। চাবুকের অাঘাতে তার গায়ের চামরা কালো হয়ে গিয়েছে। সে এখন অার কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এতোদিনে মেহেরজানও অনেক পাল্টে গিয়েছে। প্রাসাদের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে অাগের থেকেও বেশী সুন্দরী হয়েছে। কিন্তু তারপরও যুবকটির দু'চোখ তার প্রিয়তমাকে দেখে চিনে ফেলল। সে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল মে...হের...বা...ন। এতে মেহেরবান অনেক রেগে গেল এবং খলিফার দিকে তাকিয়ে বলল কতবড় সাহস এই ক্রীতদাসের অাপনার বিবিকে সে নাম ধরে ডাকে। ওকে অারও শাস্তি দিন জাহাপনা। খলিফা হারুন অার রশিদ তখন হো হো করে হেসে উঠলেন এবং বললেন তুমি এখনও ওকে চিনতে পারোনি মেহেরবান। এ হচ্ছে তোমার সেই প্রেমিক যার সাথে তুমি গভীর রাত পর্যন্ত হাসিতে মেতে উঠতে। তুমি তার থেকে দূরে যাওয়ার পর থেকে অাজ পর্যন্ত সে কারওর সাথে একটি কথাও বলেনি। এটা শুনে মেহেরবান কেঁদে ফেলল। খলিফা হারুন অার রশিদ তাকে অাদেশ দিলেন ক্রীতদাসকে হাসতে রাজি করাতে তাহলে সে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। মেহেরবান অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হল না। শুধু একটি কথায় তার মুখ থেকে ঝাপসা হয়ে ভেসে অাসতে লাগল.....
দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দি কেনা সম্ভব। কিন্তু ক্রীতদাসের হাসি না।
# লেখক: শওকত ওসমান
মানুষ চাইলেই কাউকে জোর করে সুখী করতে পারেনা, না পারে টাকা দিয়ে সুখ কিনতে। সুখ এমন এক বস্তু যা কেবল অাত্মতৃপ্তিতেই পাওয়া যায়। যখন কেউ কারওর সুখি হওয়ার সমস্ত উপকরণ ছিনিয়ে নিয়ে টাকা পয়সা কিংবা বিলাসবহুল বাড়ি দিয়ে সুখী করতে চায়, বিপত্তি বাধে তখনই। শওকত ওসমান রচিত উপন্যাস "ক্রীতদাসের হাসি" একই বার্তা বহণ করে।
গভীর রাতে যখন খলিফা হারুন অার রশিদ চিন্তায় জর্জরিত হয়ে বাগানে পায়চারী করছিলেন। তখন তারই এক ক্রীতদাস নির্লিপ্ত মনে হাসছিল। তা দেখে খলিফার মনে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হল। তিনি ক্রীতদাসের হাসির রহস্য জানার জন্য বিচলিত হয়ে পড়লেন। কিছুদিন পর অাবিষ্কার করলেন খলিফার দাসী মেহেরবান এক যুবকের জন্য রাতে খাবার নিয়ে অাসেন এবং তারা দু'জনে গভীর রাত পর্যন্ত হাসি-খুশিতে মেতে উঠেন। তা দেখে খলিফা ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনোএক রাতে তাদের তাবু অাক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এক পর্যায়ে খলিফা হারুন অার রশিদ জানতে পারেন তারা কিছুদিন পূর্বে বিবাহবন্ধনে অাবদ্ধ হয়েছে। তাই অাইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া যায়না। তখন তিনি বলেন তার বিনা অনুমতিতে কখনোই তার রাজ্যে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। সুতরাং তাকে (তাতারি) শাস্তি পেতেই হবে। তবে তাকে এক শর্তে ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদি সে নিয়মিত খলিফার সামনে প্রতিরাতের মতো বিশুদ্ধ হাসি হাসতে পারে। বিনিময়ে অারও তাকে দেওয়া হবে অসংখ্য টাকাকড়ি ও সুন্দর বাগান সমেত একটি বিলাসবহুল বাড়ি।
এরপর খলিফার নির্দেশে একজন সামান্য ক্রীতদাসকে রাখা হল রাজ্যের সবথেকে দামী অার সুন্দর বাড়িতে। সেখানে তার অাপ্যায়নের জন্য রইলো অগণিত দাসদাসী। অথচ ক্রীতদাসের মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। খলিফা হারুন অার রশিদ যতোবার তার কাছে অাসেন শুধু একটুখানি হাসি দেখার জন্য প্রতিবারই তিনি খালি হাতে ফিরে যান। এবার তাকে শেষ বারের মতো সাবধান করে দেওয়া হল পরের বার যদি সে খলিফার সামনে অাগের মতো সুন্দর করে হাসতে না পারে তবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। এতেও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলনা। এখনো সে অাগের মতোই নির্জীব থাকে। কারওর সাথে কোনো কথা বলেনা। এতে খলিফা অনেক রেগে গেলেন এবং সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন তাকে কালকুঠুরিতে বন্ধী করতে এবং কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিতে। যখন তাতেও কিছু হল না তখন খলিফা হারুন অার রশিদ কালকুঠুরিতে এক দাসীকে পাঠালেন তাতারিকে রাজি করাতে সে যেন জাহাপনার অাদেশ মেনে নেই। তাহলে তার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
মেহেরবান যখন ক্রীতদাসের সামনে উপস্থিত হল তখন তিনি দেখলেন তাকে চেনাই যাচ্ছে না। চাবুকের অাঘাতে তার গায়ের চামরা কালো হয়ে গিয়েছে। সে এখন অার কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এতোদিনে মেহেরজানও অনেক পাল্টে গিয়েছে। প্রাসাদের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে অাগের থেকেও বেশী সুন্দরী হয়েছে। কিন্তু তারপরও যুবকটির দু'চোখ তার প্রিয়তমাকে দেখে চিনে ফেলল। সে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল মে...হের...বা...ন। এতে মেহেরবান অনেক রেগে গেল এবং খলিফার দিকে তাকিয়ে বলল কতবড় সাহস এই ক্রীতদাসের অাপনার বিবিকে সে নাম ধরে ডাকে। ওকে অারও শাস্তি দিন জাহাপনা। খলিফা হারুন অার রশিদ তখন হো হো করে হেসে উঠলেন এবং বললেন তুমি এখনও ওকে চিনতে পারোনি মেহেরবান। এ হচ্ছে তোমার সেই প্রেমিক যার সাথে তুমি গভীর রাত পর্যন্ত হাসিতে মেতে উঠতে। তুমি তার থেকে দূরে যাওয়ার পর থেকে অাজ পর্যন্ত সে কারওর সাথে একটি কথাও বলেনি। এটা শুনে মেহেরবান কেঁদে ফেলল। খলিফা হারুন অার রশিদ তাকে অাদেশ দিলেন ক্রীতদাসকে হাসতে রাজি করাতে তাহলে সে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। মেহেরবান অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হল না। শুধু একটি কথায় তার মুখ থেকে ঝাপসা হয়ে ভেসে অাসতে লাগল.....
দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দি কেনা সম্ভব। কিন্তু ক্রীতদাসের হাসি না।
Comments
Post a Comment